Feeds:
পোস্ট
মন্তব্য

Links

Tongue Twisters

ছাত্র আন্দোলন

একটা দেশে জনগনই যেমন সকল ক্ষমতার উৎস, তেমনই একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষকরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনই সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ, জনগন তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে আর সেই প্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনার দায়ীত্ব গ্রহণ করে। অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এর প্রশাসনের উপরই সকল দায়ীত্ব ন্যাস্ত থাকে। কিন্তু, দেশে বিরোধীদল থাকে সরকারী দলের কাজ তদারকি করার জন্য। কোন অনিয়ম বা জনগনের স্বার্থ বিরোধী কিছু হলে জনগনকে নিয়ে তারা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের হটকারী সীদ্ধান্ত বিরোধীতার জন্য কোন বিরোধী শক্তি থাকে না। তখন ছাত্ররা এর বিরোধীতা করলে, ছাত্ররাই হয় ভিলেন।

একটি দেশে বিরোধী দলের যেমন প্রত্যক্ষ ভুমিকা আছ, তেমনি ছাত্ররা তাদের মৌলিক দাবিসমুহ আদায়ের জন্য প্রশাসনের বিরোধী হবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে ছাত্র আন্দোলনের বহুত ভাল নজির আছে। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা, গণ অভ্যূত্থান এবং আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাত্রদের ভুমিকা অসামান্য। দেশ স্বাধীন হবার পরেও বিভিন্ন সময় তাদের দাবী বাস্তবায়নে প্রশাসনের সাথে যৌক্তিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। পুলিশি নির্যাতন, ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি এমনকি বহিঃষ্কারের পরেও এসকল আন্দোলন দমিয়ে রাখা যায়নি। কারন, ছাত্রদের sentiment, ছাত্রদের বয়স, ছাত্রদের রক্ত।

কিন্তু, এই sentiment যখন শুধুমাত্র এক পক্ষীয় দিক বিবেচনায় হয় তখন তা আর গঠন মূলক ছাত্র আন্দোলন থাকে না। বর্তমানে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, যখনই ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় তখনই তা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলে আসে। এটা আমাদের কাররই কাম্য নয়। এতে সাধারণ ছাত্ররা তাদের দাবী আদায়ের আন্দোলন থেকে পিছিয়ে পড়ে। আবার, যদি বিশেষ কোন রাজনৈতিক সংগঠনের ছায়ায় না থেকে অর্থাৎ, সকল ছাত্র-ছাত্রী একই প্লাটফর্মে এসে আন্দোলন শুরু করে তখনও এর সঠিক যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে।

আমি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ঘটনা থেকে এই প্রশ্ন তুললাম। এখানে দেখা যায়, বিভিন্ন ইস্যুতে ছাত্ররা মাঝে মধ্যেই প্রশাসনের সাথে conflict-এ জড়িয়ে পড়ে। এর সবগুলোই ঐ সময়ের জন্য যৌক্তিক মনে হলেও পরবর্তিতে এর বিরুপ প্রভাব নজরে আসে। কিছু দিন আগেই আমাদের এখানে ছাত্ররা term final পরীক্ষা পেছানোর দাবীতে আন্দোলনে নামে। প্রশাসন প্রথমে এতে সায় না দিলেও, ছাত্ররা পরে ধ্বংসাত্বক হয়ে উঠলে স্যাররা বাধ্য হন এ দাবী মেনে নিতে। ছাত্ররা ঐ সময়ে তাদের বিজয়ে খুশি হলেও, এখন পরে এসে যখন পরীক্ষাই অনিশ্চিত হয়ে গেছে তখন তাদের টনক নড়েছে। বিশেষ করে শেষ বর্ষের ছাত্রদের। অথচ তুচ্ছ বিষয়ে যখন পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন শুরু হয় তখন তাতে শেষ বর্ষেরও মৌন সম্মতি ছিল।

আমাদের দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা পেছানোর জন্য আন্দোলন শুরু হয়। এসব তুচ্ছ কারনে ছাত্ররা ঠিক সময়ে বের হতে পারছেনা। এমন session জটের ঝামেলায় পড়ে তারা পিছিয়ে পড়ছে। এর ফলে দেশও পিছিয়ে পড়ছে। ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যত কান্ডারি। এরা যদি শুরুতেই এরকম ভুল করে তবে দেশ সামলাবে কে? আমার মতের সাথে হয়ত অনেকেই দ্বিমত পোশন করবেন। হয়ত বলবেন ফাউ জ্ঞান দিচ্ছে। কিন্তু, ছাত্র আন্দোলনের ফলে যদি ছাত্রদের পক্ষান্তরে দেশের কোন উপকার না হয়ে তবে কি দরকার এমন ছাত্র আন্দোলনের ?

প্রতিযোগীতার ব্যবসা

বর্তমানে আমাদের দেশে বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শুরু হয়েছে নানান প্রতিযোগীতা। এর বেশীর ভাগই এখন পরিচালিত হচ্ছে টেলিভিশন বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার দ্বারা। এসব প্রতিযোগীতার প্রায় সবগুলোই বাইরের দেশ, বিশেষকরে প্রতিবেশী ভারতের হুবহু অনুকরন বা এককথায় নকল। প্রতিযোগীতা হওয়া ভাল, ক্ষেত্র বিশেষে এটার দরকার আছে। কিন্তু এটা যদি হাল আমলের কোচিং সেন্টারের মত ব্যাঙের ছাতার মত শুরু হয় তবে তার সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।

ইদানিং কালে আমাদের দেশের টিভি চ্যানেল গুলোতে সারা বছরেই কোন না কোন প্রতিযোগীতা লেগেই আছে। অনেক সময়তো এক সাথে একাধিক চ্যানেলে একই ধরনের প্রতিযোগীতা চলতে থাকে। প্রযোজক-পরিচালকরা এর নাম দিয়েছেন “ট্যালেন্ট সার্চ”। তারা দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে অতি সুচারুরুপে (!) বাছাই করে প্রতিযোগীদের নিয়ে আসেন। নাচ, গান, অভিনয় থেকে শুরু করে বিভিন্নদিকে এসকল প্রতিযোগীদের expert হতে হয়। প্রতিযোগীতা শেষে বিজয়ীদের দেয়া হয় অতি মুল্যবান পুরষ্কার আর তাদের ভবিষ্যত কাজের সুন্দর সূচনার সুযোগ।

এসব প্রতিযোগীতার মাধ্যমে দেশ সংস্কৃতির বিভিন্ন আঙিনায় বাছাই করা গুণী শিল্পী পাচ্ছে। এটা ভালই! কিন্তু, আমার প্রশ্ন অন্য খানে। প্রতি বছর আমাদের মাঝে যেসব ট্যালেন্ট(!) শিল্পীরা আসছেন তারা যাচ্ছেন কোথায়? তারা যদি তাদের শুভ গুণ গুলিকে আমাদের মাঝে ছড়িয়ে যেতেন তাহলে নিশ্চয় আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির এমন বেহাল দশা হত না। আর যারা এসব মেধাবীদের নিয়ে এসে এদের সুন্দর সূচনার সুযোগ করে দিচ্ছেন, তারাই বা পরে এদের নিয়ে আর মাথা ঘামান না কেন? তারা আবার নব উদ্যোমে নতুন ট্যালেন্ট মুখের জন্য পাগলপারা হয়ে খুঁজে চলেছেন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া! শুধু তাই নয়, দেশের বাইরেও ইনারা তাদের ট্যালেন্ট হান্টিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

আপনারা অনেকেই আমার মতের বিপরীত হতে পারেন। কিন্তু,এসকল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এত সোচ্চার হবার কারণ কি? কারন তাদের পেছনে আছে অগনিত স্পন্সর। ঢাকার বাইরের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে Project Show, Programming contest বা Olympiad করার জন্য যেখানে হন্যে হয়ে খুঁজেও অর্ধেক স্পন্সরও পাওয়া যায় না, সেখানে এসকল কাজের জন্য মনে হয় স্পন্সররা admission দিয়ে তারপর merit list-এ যায়গা করে নেন। আর যারা waiting list-এ থাকেন চেষ্টা করেন একটু তদবিরের মাধ্যমে কি করে merit list-এ আসা যায়। এর কারন সেই আপামর জনগন। এই জনগন কি রাজনীতিকের কাছে, কি অভিনেতার কাছে আর কি মিডিয়ার কাছে, সর্বক্ষেত্রেই “বলির পাঁঠা”।

আমাদের দেশী সমাজে আধুনিকতার ছোঁয়ার নামে যেসব চলছে তা এই জনগন ধরতে পারছে না। পরিবারের সকলে মিলে, এক সোফায় বসে যখন এসব সুন্দরী হান্ট দেখেন তখন পরিবারের কর্তা রিমোর্টটা নিয়ে উঠতি বয়সের ছেলে/মেয়ের সামনে চ্যানেল পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। কিন্তু, সেই ছেলে বা মেয়ে এমনকি পরিবারের কর্তা পর্যন্ত নিজের পকেটের টাকা খরচ করে SMS করতে ভুল করেননা। আবার ঘরের বাইরে বের হলেই দেখা যায়, দেয়ালে পোষ্টার “আপনার জেলার একমাত্র প্রতিযোগী, ভোট দিন, জেলার নাম উজ্জ্বল করুন”। এই ছোট দেশে সবাই দেশকে সবাই দেশকে এককাতারে না দেখে, ৬৪ কোন ক্ষেত্রে আরও বেশী ভাগে ভাগ করছেন এই জনগনেরাই। এটা কি সাম্প্রদায়ীকতা নয়?

কিছুদিন আগে শেষ হল “লাক্স-চ্যানেল আই সুপারষ্টার” প্রতিযোগীতা। বিজয়ী নাকি ভালভাবে বাংলা বলতে পারেন না! যে দেশ ভাষার জন্য স্বাধীন হল, তার প্রতিযোগীতার সবচেয়ে ট্যালেন্ট জন যদি বাংলায় না পারে তবে বোঝায় যায় এসব প্রতিযোগীতার বিচারকার্যের কি অবস্থা! আর এর পেছনের দিকটা যারা এর সথে জড়িত তারাই ভাল বলতে পারবেন। আমাদের আয়োজকরা মনে হয় চিন্তাও করেননা, তরুন সমাজের ওপর এগুলো কতটা প্রভাব ফেলছে! আমাদের সমাজ এরকম কলুষিত হচ্ছে কেন? যেখানে ট্যালেন্টদের দ্বারা আমাদের সমাজটা আলোকরশ্নিতে ভরে উঠার কথা, সেখানে কেন এত কালীমা?

কারন একটায়। প্রকৃত ট্যালেন্ট সঠিকভাবে না উঠে আসা ও সঠিক পৃষ্টপোশকতা না পাওয়া। তাদেরতো এটার দরকার নেই, তাদের দরকার লাভ। হোকনা সেটা ট্যালেন্ট সার্চের নামে প্রতিযোগীতার ব্যবসা !!!!!!

বীজ

ব্লগিং জগতে এটাই আমার প্রথম লেখা (যদি আমি শেষ পর্যন্ত লিখে শেষ করতে পারি……) তাই লেখার শিরোনাম দিলাম বীজ। কিন্তু যদি এটা অংকুরের আগেই মারা যায়, তবে আমার ব্লগিং জগতটাও আর এগোবে না বলেই আমার বিশ্বাস।

ছোটবেলা থেকেই অনেকে লেখালেখির কাজে সফলতার সাথে আত্ননিয়োগ করে। অনেকেই আবার এটা দেখে অতি উৎসাহী হয়ে তাদের মত হতে চায়। আমি অনেকটা ২য় দলে ছিলাম। কিন্তু, অচিরেই আমি আমার পারদর্শিতা উপলব্ধি করে লেখার জগত থেকে অবসর নিয়ে শুধু পড়ার জগতে মনোনিবেশ করি। কিন্তু, পড়ার জগতের পরিসর কিছু নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতরেই আবদ্ধ থেকে গেল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই পরিসরটাও বাড়তে থাকল। স্কুল থেকে কলেজ, এই সময়ে পড়ার জগতটা ঠিকই ছিল। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এটারও বিচ্ছেদ ঘটল। কারন, না পড়ালেখার চাপ নয়, খেলাধুলার চাপ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল শিক্ষায় পড়ার চাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, এই চাপটা সম্পুর্ণ ভাবে এড়িয়ে খেলাধুলাটাই প্রকট আকার ধারণ করল। দিনে মাঠ আর রাতে কম্পিউটার গেমস, সমান তালে চলতে থাকল। ফলশ্রুতিতে আমার অতীতের পড়ার জগতটারও অপমৃত্যু ঘটল। আর লেখার জগত, সেটাতো আগেই বলেছি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে আবার হটাৎ পড়ার আগ্রহটা পেয়ে বসল। কিন্তু, এবার আর কাগুজে লেখা নয়, ডিজিটাল লেখা। ইন্টারনেটের কল্যাণে দেশের সব খবরা-খবরতো বটেই বিশ্বের সব খবর যখন একনিমেষেই জানতে পারি, সেসব খবরের পরের খবর অর্থাৎ সাধারন মানুষের এর ওপর কি প্রতিক্রিয়া তাও জানা যায়। এসব মন্তব্যের জবাব, পাল্টা জবাব পড়তে ভালই লাগে। কিন্তু, যখন দেখি তা আমার মতের সাথে মিলছে না বা সেখানে আমারও কিছু বলার ছিল, তখন আবার সেই মৃত লেখালেখির ভাবটা প্রয়োজন বোধকরি।

এই প্রয়োজনটা উপলব্ধি করেই আমার ব্লগিং জগতে প্রবেশ। জানি এই বিশাল জগতে আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ। আমার চিন্তা-ভাবনার সাথে অন্যেরটা নাও মিলতে পারে। তবুও লেখার সেই পুরোন ভাবটাতো আবার ফেরত এল। এই লেখাটা শুরু করেছিলাম প্রায় সাড়ে চার মাস আগে। শেষ করতে পারলাম এটা একান্তই সৃষ্টিকর্তার কৃপা। আশা করি লেখার এই বীজটা অঙ্কুরোদগম ঘটল। আল্লাহই ভাল জানেন অঙ্কুর শেষে বীজটা চারা হবে কি না।

আশা করি আপনাদের দোয়ায় বীজটা, চারা থেকে গাছও হতে পারে। সকলকে ধন্যবাদ।