বর্তমানে আমাদের দেশে বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শুরু হয়েছে নানান প্রতিযোগীতা। এর বেশীর ভাগই এখন পরিচালিত হচ্ছে টেলিভিশন বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার দ্বারা। এসব প্রতিযোগীতার প্রায় সবগুলোই বাইরের দেশ, বিশেষকরে প্রতিবেশী ভারতের হুবহু অনুকরন বা এককথায় নকল। প্রতিযোগীতা হওয়া ভাল, ক্ষেত্র বিশেষে এটার দরকার আছে। কিন্তু এটা যদি হাল আমলের কোচিং সেন্টারের মত ব্যাঙের ছাতার মত শুরু হয় তবে তার সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।
ইদানিং কালে আমাদের দেশের টিভি চ্যানেল গুলোতে সারা বছরেই কোন না কোন প্রতিযোগীতা লেগেই আছে। অনেক সময়তো এক সাথে একাধিক চ্যানেলে একই ধরনের প্রতিযোগীতা চলতে থাকে। প্রযোজক-পরিচালকরা এর নাম দিয়েছেন “ট্যালেন্ট সার্চ”। তারা দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে অতি সুচারুরুপে (!) বাছাই করে প্রতিযোগীদের নিয়ে আসেন। নাচ, গান, অভিনয় থেকে শুরু করে বিভিন্নদিকে এসকল প্রতিযোগীদের expert হতে হয়। প্রতিযোগীতা শেষে বিজয়ীদের দেয়া হয় অতি মুল্যবান পুরষ্কার আর তাদের ভবিষ্যত কাজের সুন্দর সূচনার সুযোগ।
এসব প্রতিযোগীতার মাধ্যমে দেশ সংস্কৃতির বিভিন্ন আঙিনায় বাছাই করা গুণী শিল্পী পাচ্ছে। এটা ভালই! কিন্তু, আমার প্রশ্ন অন্য খানে। প্রতি বছর আমাদের মাঝে যেসব ট্যালেন্ট(!) শিল্পীরা আসছেন তারা যাচ্ছেন কোথায়? তারা যদি তাদের শুভ গুণ গুলিকে আমাদের মাঝে ছড়িয়ে যেতেন তাহলে নিশ্চয় আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির এমন বেহাল দশা হত না। আর যারা এসব মেধাবীদের নিয়ে এসে এদের সুন্দর সূচনার সুযোগ করে দিচ্ছেন, তারাই বা পরে এদের নিয়ে আর মাথা ঘামান না কেন? তারা আবার নব উদ্যোমে নতুন ট্যালেন্ট মুখের জন্য পাগলপারা হয়ে খুঁজে চলেছেন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া! শুধু তাই নয়, দেশের বাইরেও ইনারা তাদের ট্যালেন্ট হান্টিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
আপনারা অনেকেই আমার মতের বিপরীত হতে পারেন। কিন্তু,এসকল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এত সোচ্চার হবার কারণ কি? কারন তাদের পেছনে আছে অগনিত স্পন্সর। ঢাকার বাইরের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে Project Show, Programming contest বা Olympiad করার জন্য যেখানে হন্যে হয়ে খুঁজেও অর্ধেক স্পন্সরও পাওয়া যায় না, সেখানে এসকল কাজের জন্য মনে হয় স্পন্সররা admission দিয়ে তারপর merit list-এ যায়গা করে নেন। আর যারা waiting list-এ থাকেন চেষ্টা করেন একটু তদবিরের মাধ্যমে কি করে merit list-এ আসা যায়। এর কারন সেই আপামর জনগন। এই জনগন কি রাজনীতিকের কাছে, কি অভিনেতার কাছে আর কি মিডিয়ার কাছে, সর্বক্ষেত্রেই “বলির পাঁঠা”।
আমাদের দেশী সমাজে আধুনিকতার ছোঁয়ার নামে যেসব চলছে তা এই জনগন ধরতে পারছে না। পরিবারের সকলে মিলে, এক সোফায় বসে যখন এসব সুন্দরী হান্ট দেখেন তখন পরিবারের কর্তা রিমোর্টটা নিয়ে উঠতি বয়সের ছেলে/মেয়ের সামনে চ্যানেল পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। কিন্তু, সেই ছেলে বা মেয়ে এমনকি পরিবারের কর্তা পর্যন্ত নিজের পকেটের টাকা খরচ করে SMS করতে ভুল করেননা। আবার ঘরের বাইরে বের হলেই দেখা যায়, দেয়ালে পোষ্টার “আপনার জেলার একমাত্র প্রতিযোগী, ভোট দিন, জেলার নাম উজ্জ্বল করুন”। এই ছোট দেশে সবাই দেশকে সবাই দেশকে এককাতারে না দেখে, ৬৪ কোন ক্ষেত্রে আরও বেশী ভাগে ভাগ করছেন এই জনগনেরাই। এটা কি সাম্প্রদায়ীকতা নয়?
কিছুদিন আগে শেষ হল “লাক্স-চ্যানেল আই সুপারষ্টার” প্রতিযোগীতা। বিজয়ী নাকি ভালভাবে বাংলা বলতে পারেন না! যে দেশ ভাষার জন্য স্বাধীন হল, তার প্রতিযোগীতার সবচেয়ে ট্যালেন্ট জন যদি বাংলায় না পারে তবে বোঝায় যায় এসব প্রতিযোগীতার বিচারকার্যের কি অবস্থা! আর এর পেছনের দিকটা যারা এর সথে জড়িত তারাই ভাল বলতে পারবেন। আমাদের আয়োজকরা মনে হয় চিন্তাও করেননা, তরুন সমাজের ওপর এগুলো কতটা প্রভাব ফেলছে! আমাদের সমাজ এরকম কলুষিত হচ্ছে কেন? যেখানে ট্যালেন্টদের দ্বারা আমাদের সমাজটা আলোকরশ্নিতে ভরে উঠার কথা, সেখানে কেন এত কালীমা?
কারন একটায়। প্রকৃত ট্যালেন্ট সঠিকভাবে না উঠে আসা ও সঠিক পৃষ্টপোশকতা না পাওয়া। তাদেরতো এটার দরকার নেই, তাদের দরকার লাভ। হোকনা সেটা ট্যালেন্ট সার্চের নামে প্রতিযোগীতার ব্যবসা !!!!!!
valo…………
Sobkichur Bhalo/Mondo – Duto dik royeche. Protijogita ekdike jemon gorib riksawalar talent ke amder samne niye asche, temonye poromuhurte, tara TV-r porda theke hariye jacce.
এটা ঠিক। কিন্তু, আমরা মন্দের চেয়ে ভালটাই বেশী দেখতে চাই।
[…] প্রতিযোগীতার ব্যবসা […]